শিক্ষা

সমাজ ২য় অধ্যায় ৭ম শ্রেনী : বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র 

 

সমাজ ২য় অধ্যায়
৭ম শ্রেণী সমাজ ২য় অধ্যায় : বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র

৭ম শ্রেনী ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ১ :

আবুল সোনাগাজী গ্রামের একজন কৃষক। তার নিজের জমি নেই। অন্যের জমিতে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আবুলের ছেলে রহমান শহরে একটি পোশাক কারখানায় বউসহ কাজ করে এবং একটি ছোট বাসায় বসবাস করে।
ক. সামাজিকীকরণ কী?
খ. মাঝারি শিল্প বলতে কী বোঝ?
গ. আবুলের সংস্কৃতির ধরন ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আবুলের সংস্কৃতি ও রহমানের সংস্কৃতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো

৭ম শ্রেনী ২য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ১ সমাধান :

সমাধান : ক. শিশু একটি পরিবারে তথা সমাজে যেভাবে সামাজিক হয়ে গড়ে ওঠে তাকে সামাজিকীকরণ বলে।
খ. যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে দেড় কোটি টাকার বেশি মূলধন খাটে সেগুলোকে মাঝারি শিল্প বলা হয়। মাঝারি শিল্পে বৃহৎ শিল্প অপেক্ষা কম উৎপাদন হয়।
হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং, সিল্ক, সিরামিক, কোল্ড স্টোরেজ বা হিমাগার প্রভৃতি এ শিল্পের অন্তর্গত। দেশের চাহিদা পূরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে এ ধরনের শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গ. আবুলের সংস্কৃতি গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। গ্রামাঞ্চলের পেশাজীবী মানুষের বিভিন্ন আচরণ বা ভূমিকার একত্রিত রূপই গ্রামীণ সংস্কৃতি।
যে সকল পেশাজীবীর সাথে গ্রামীণ সংস্কৃতি জড়িত তার মধ্যে কৃষক, জেলে, তাঁতি, কামার, কুমার, মাঝি, দর্জি,
কবিরাজ প্রভৃতি অন্যতম।
উদ্দীপকের আবুল গ্রামে বসবাস করে এবং কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তার বাসস্থান ও পেশার ধরন থেকে বলা যায় এটি গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
এ ধরনের সংস্কৃতি গ্রামীণ মানুষের জীবনব্যবস্থা নিয়ে গড়ে ওঠে। এ সংস্কৃতির প্রধান দুটি দিক হলো গ্রামের মানুষের সামাজিক অর্থনেতিক জীবন এবং তাদের উৎসব ও বিনোদন।
বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবে এ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
ঘ. ‘আবুলের সংস্কৃতি ও রহমানের সংস্কৃতি’ অর্থাৎ গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। গ্রামীণ বিভিন্ন পেশাজীবীর জীবন, আচরণ ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে গড়ে ওঠে গ্রামীণ সংস্কৃতি।

সমাজ ২য় অধ্যায় ৭ম শ্রেনী 

অন্যদিকে শহুরে মানুষের আচার-ব্যবহার ও জীবন ব্যবস্থা নিয়ে তৈরি হয় শহুরে সংস্কৃতি। উদ্দীপকে আবুল একজন গ্রামীণ চাষি এবং তার ছেলে রহমান শহরে একজন কর্মজীবী।
সুতরাং তাদের সংস্কৃতি যথাক্রমে গ্রামীণ ও শহুরে সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। শহরের সংস্কৃতি অনেক দিক থেকে গ্রামের চেয়ে আলাদা। গ্রামের সকল মানুষ একে অন্যের খবর রাখে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা একত্রিত হয়।
এদিক থেকে শহরবাসীর সামাজিক জীবনের গণ্ডি বেশ ছোট। একই দালানে থেকেও প্রতিবেশীদের সাথে যোগাযোগ হয়
না। এছাড়া খোলা মাঠ না থাকায় অনেক সময় শিশুদের খেলাধুলা করা করো।
তাহলে এ সম্ভব হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসও গ্রামীণ মানুষদের থেকে কিছুটা ভিন্ন। উৎসবের ক্ষেত্রে শহুরে মানুষ গ্রামীণ ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি জাতীয় উৎসবও পালন করে।
উপরের আলোচনার থেকে তাই বলা যায় যে, আবুল ও রহমানের সংস্কৃতিতে অর্থাৎ গ্রামীণ ও শহরের সংস্কৃতিতে বিভিন্ন পার্থক্য বিদ্যমান।

৭ম শ্রেনী সৃজনশীল  প্রশ্ন ২ :

বাংলা প্রথম মাসের প্রথম দিন। মুন, মিলি, মিমি, লায়বা, সাইরী সকলে মিলে ঠিক করে তারা শিমুল তলায় যাবে।
সকলে সাদা রঙের লাল পাড়ের শাড়ি পড়বে। সেখানে মেলায় জারি গান ও কবিতা শুনবে। প্রতি বছরই সেখানে বহু মানুষের সমাগম হয়।
ক. ‘গোপী নাচ’ কোন নৃগোষ্ঠীর উৎসব?
খ. ‘বৈসাবি’ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে কোন মেলার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে উদ্দীপকে বর্ণিত মেলার ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

সৃজনশীল প্রশ্ন ২ সমাধানঃ

সমাধান : ক. ‘গোপী নাচ’ মণিপুরি নৃগোষ্ঠীর উৎসব।
খ. ‘বৈসাবি’ বলতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, তঞ্চঙ্গা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর যৌথভাবে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপনকে বোঝায়। পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গা নৃগোষ্ঠীর |
সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে যথাক্রমে বৈসুক’, ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বিজু’ নামে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করতেন। বর্তমানে তারা এই তিনটি উৎসবকে সমন্বয় করে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করেন।
বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে।
গ. উদ্দীপকে বাংলার তথা বাঙালি জাতির প্রাণের উৎসব বৈশাখী মেলার কথা বলা হয়েছে। বাংলা মাসের প্রথম দিন অর্থাৎ ১লা বৈশাখে বৈশাখী মেলা’ উদযাপন করা হয়। সারা দেশেই এ মেলার আয়োজন করা হয়।
মেয়েরা সাধারণত লাল সাদা শাড়ি আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে বৈশাখী মেলায় আসে। ঢাকার রমনা পার্কে অবস্থিত বটমূলে দেশের প্রধান বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়।
এখানে সাংস্কৃতিক কর্মীরা বাংলা সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত গান (রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, লালন শাহ, হাসন রাজা প্রমুখ রচিত গান) পরিবেশন ও কবিতা আবৃত্তি করেন।
পুরো দেশ থেকেই সাধারণ মানুষ এ মেলায় অংশগ্রহণের জন্য আসেন। সারাদিন মানুষ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর আয়োজন উপভোগ এবং আনন্দ-উচ্ছাসের মধ্য দিয়ে সময় কাটায়।

৭ম শ্রেনী সমাজ ২য় অধ্যায় 

উদ্দীপকে মুন, মিলি, মিমি, লায়বা, সাইরী বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে শিমুলতলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা সেখানে গান ও কবিতা শুনবে।
এর সাথে রমনার বটমূলে আয়োজিত বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মিল আছে। তাই বলা যায় যে, তারা শিমুলতলায় আয়োজিত বৈশাখী মেলায় যাবে।
ঘ. বাংলার সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিকাশে উদ্দীপকে বর্ণিত বৈশাখী মেলার ভূমিকা অপরিসীম।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেশজুড়ে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। দেশের সকল ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এ মেলায় যোগ দেয়।
ফলে বৈশাখী মেলার আয়োজনে দেখা যায় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য। নারী-পুরুষ-শিশুরা সাদা-লাল রঙের শাড়ি ও পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে বৈশাখী মেলাকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
শহুরে কোনো কোনো মেলায় পান্তাভাত, ইলিশ মাছ, ভর্তা ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী বাঙালি খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
আবার কোথাও বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায় সমন্বিতভাবে নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এ ধরনের মেলায় যাত্রা, থিয়েটার, পাঁচালি, কবিগান, কীর্তন ও বাউলগানেরও আয়োজন করা হয়।
বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীও তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির অনুসরণে বৈশাখী মেলা বা বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করে।
এসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে।
শুধু তাই নয়, মেলায় বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ অংশগ্রহণ করার ফলে নানাধরনের সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটে।
সার্বিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাই বলা যায় যে, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ :

রুমা ৭ম শ্রেণির একজন ছাত্রী। আজ শিক্ষিকা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ক্লাসে পড়ালেন মানুষ যুগ যুগ ধরে এই সংস্কৃতিকে লালন করে আসছে।
মানুষের মুখে মুখে এই সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এর অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে।
ক. নাখাম কী?
খ. বৈসাবি বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন সংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারাগুলো বিশ্লেষণ করো।

৭ম শ্রেনী সমাজ ২য় অধ্যায়   সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান

সমাধান : ক. নাখাম হলো শুঁটকি মাছ যা গারোদের প্রিয় খাদ্য।
খ. ‘বৈসাবি’ বলতে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, তঞ্চঙ্গা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর যৌথভাবে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপনকে বোঝায়।
পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা, মারমা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গা নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা আলাদা আলাদাভাবে যথাক্রমে ।  ‘বৈসুক’, ‘সাংগ্রাই’ এবং ‘বিজু’ নামে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব উদযাপন করতেন।
বর্তমানে তারা এই তিনটি উৎসবকে সমন্বয় করে ‘বৈসাবি’ নামে পালন করেন।
‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়েছে এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর নিয়ে।
গ. উদ্দীপকে লোকসংস্কৃতির কথা বলা হয়েছে। লোকসংস্কৃতি বলতে আমরা বুঝি সাধারণ মানুষ ও তার সমাজের সংস্কৃতিকে।
এ সংস্কৃতির জন্ম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে, তাদের চিন্তায় ও কর্মে।
হাজার বছর ধরে এই সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
তবে মানুষের মুখে মুখে বলা লোকসংস্কৃতির অনেক কিছুই সময়ের সাথে সাথে একটু একটু করে পরিবর্তন হয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ৭ম শ্রেণির ছাত্রী রুমার শিক্ষিকা বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ক্লাসে পড়ালেন যে, মানুষ যুগ যুগ ধরে একটি সংস্কৃতি লালন করে আসছে।

সমাজ ২য় অধ্যায় ৭ম শ্রেনী সৃজনশীল প্রশ্নঃ

পরবর্তীতে এই সংস্কৃতি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। সময়ের সাথে সাথে এর অনেক কিছু পরিবর্তনও হয়েছে।
শিক্ষিকার বর্ণিত এ সংস্কৃতি উপরে বর্ণিত লোকসংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে লোকসংস্কৃতিকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সংস্কৃতি হলো লোকসংস্কৃতি যার বিভিন্ন ধারা রয়েছে।
লোকসংস্কৃতি হলো মানুষের মুখে মুখে সৃষ্ট সংস্কৃতি, যা হাজার বছর ধরে বিভিন্ন প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়েছে।
উদ্দীপকের শিক্ষিকা ক্লাসে লোকসংস্কৃতির কথাই বলেছেন।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিতে বিভিন্ন ধারার সৃষ্টি হয়েছে। যেমন- লোকসমাজে ভুতের ভয়ের অস্তিত্ব অনেক পুরনো।
মানুষ মারা গেলেও আত্মা অমর’ এই ধারণা থেকে লোকসমাজে ভুত থাকার ব্যাপারে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে।
আবার লোকবিশ্বাস অনুযায়ী ভুত তাড়াতে ওঝারা ঝাড়ফুঁক, হলুদ পোড়া, মরিচ পোড়া ইত্যাদি প্রয়োগ করে।
লোকসংস্কৃতির অন্যতম অনুষ্ঠান গায়ে হলুদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরনের আচার-সংস্কার পালন করা হয়।
আবার রোগমুক্তির জন্য হিন্দুরা পুরোহিত এবং মুসলমানরা পির বা মৌলভী সাহেবদের তাবিজ বা মাদুলি গলায় বা
বাহুতে বেঁধে রাখে।
তাছাড়া লোকসমাজে চোখ লাগা থেকে বাঁচার জন্য বা অশুভ দৃষ্টি কাটানোর জন্য বাচ্চার কপালের পাশে কাজলের টিপ দেওয়া
হয়।
এছাড়া অনেক দিন খরা হলে বৃষ্টি নামানোর জন্য গ্রামের মেয়েরা এক ধরনের অনুষ্ঠান করে এবং মুখে মুখে বৃষ্টির গান গায়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে লোকসমাজের মানুষের বিভিন্ন বিশ্বাস থেকেই
লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন দিক সৃষ্টি হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *