শিক্ষা
বাংলাদেশের জলবায়ু : বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় ৭ম শ্রেনী ৭ম অধ্যায়

বাংলাদেশের জলবায়ু
সূচিপত্র
বাংলাদেশের জলবায়ু সৃজনশীল প্রশ্ন ১ :
প্রশ্নাত নবীন ও হামজা দুই বন্ধু। নবীন বলল, আমি বাংলাদেশের যে অঞ্চলে বাস করি সেই অঞ্চলে শীত ও খরা উভয়েরই প্রকোপ বেশি।
হামজা বলল, মনুষ্যসৃষ্ট এক ধরনের গ্যাসের কারণে আমাদের পৃথিবী ঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
ক. আবহাওয়া কী?
খ. কালবৈশাখী কেন হয়? ব্যাখ্যা কর।
গ. নবীন বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে বাস করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হামজার উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
বাংলাদেশের জলবায়ু সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান :
ক. আবহাওয়া হলো কোনো একটি অঞ্চলের একদিন বা দিনের কোনো বিশেষ সময়ের বাতাসের তাপ, চাপ, আর্দ্রতা।
খ. প্রচণ্ড উত্তাপের কারণে সৃষ্ট নিম্নচাপের ফলে কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হয়। কালবৈশাখী হলো এক ধরনের ক্ষণস্থায়ী ও স্থানীয়ভাবে সৃষ্ট প্রচণ্ড ঝড়।
সাধারণত বৈশাখ মাসেই এ ঝড় বেশি হয় বলে একে কালবৈশাখী বলা হয়। প্রায় সময় উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এ ঝড়টা আসে।
এসময় প্রচণ্ড গরমের কারণে বায়ুমণ্ডলে নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয় এবং কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে।
গ. নবীন বাংলাদেশে উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এর জলবায়ু সমভাবাপন্ন এবং নাতিশীতোষ্ণ ।
অর্থাৎ এখানে শীত ও গ্রীষ্মের তীব্রতা সহনীয় এবং সমান। তবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এর কিছুটা ব্যতিক্রম দেখা যায়। উত্তরাঞ্চল বঙ্গোপসাগর থেকে দূরে হওয়ায় গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে অসহনীয় গরম অনুভূত হয়।
নদী-নালার পানি শুকিয়ে খরার অবস্থা দেখা যায়। আবার শীতকালে এ অঞ্চলে তীব্র শীত অনুভূত হয়। উদ্দীপকের নবীন বলল যেববাংলাদেশের যে অঞ্চলে বসবাস করে সেই অঞ্চলে শীত ও খরা উভয়েরই প্রকোপ বেশি।
তাই বলা যায় নবীন উত্তরাঞ্চলে বসবাস করে।
ঘ. হামজা গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে পৃথিবীর সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা বলেছে যার যথার্থতা রয়েছে। সারা পৃথিবীতেই জলবায়ু পরিবর্তনের মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন।
এর অন্যতম নিয়ামক হলো গ্রিনহাউস গ্যাস। কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন প্রভৃতি গ্যাসকেই একসাথে গ্রিনহাউস গ্যাস বলা হয়।
বায়ুমণ্ডলে এ গ্যাসগুলো অতিরিক্ত মাত্রায় সঞ্চিত হয়ে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে। উদ্দীপকে হামজা বলল, মনুষ্যসৃষ্ট এক ধরনের গ্যাসের কারণে আমাদের পৃথিবী ঝুঁকির দিতে ধাবিত হচ্ছে।
হামজা মূলত গ্রিনহাউস গ্যাসের কথা বলেছে। এ গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলে আস্তরণের সৃষ্টি করে যা সূর্য থেকে আসা তাপকে বায়ুমণ্ডল হতে বের হতে দেয় না। এ কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ঘটে। অতএব বলা যায় যে, হামজার উক্তিটি যথার্থ।
বাংলাদেশের জলবায়ু সৃজনশীল প্রশ্ন ২ :
বাংলাদেশের ভূ-ভাগে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে। অপরদিকে ভারত
মহাসাগরের উপর বায়ুমণ্ডল ভারী হয়ে বায়ুর চাপের সৃষ্টি হয়।
ক. মৌসুমী বায়ু কী?
খ. টর্নেডো বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা কর।
গ. বাংলাদেশের ভূ-ভাগে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাতাসের কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত মহাসাগর ও স্থলভাগে সৃষ্ট অবস্থার কারণেই সিডর, আইলা ও ফনির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয় ।”— উক্তিটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
বাংলাদেশের জলবায়ু সৃজনশীল প্রশ্নসমাধান :
ক. মৌসুমি বায়ু হলো সেই বিশেষ ধরনের বায়ু যা নিয়মিতভাবে দিক পরিবর্তন করে।
খ. টর্নেডো একটি প্রচণ্ড গতিসম্পন্ন এক ধরনের ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে টর্নেডো অন্যতম। স্থলভাগের নিম্নচাপের ফলে এর উৎপত্তি হয়।
এটি স্থানীয়ভাবে সংঘটিত একধরনের ঝড়। এটি এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার সম্পর্কে আগাম কোন পূর্বাভাস বা সতর্ক সংকেত দেওয়া যায় না।
গ. বাংলাদেশে ভূ-ভাগে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বাতাসের নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। কোনো স্থানে বাতাসে তাপ অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে সেখানকার বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়।
ফলে ঐ অঞ্চলের বাতাসের চাপ কমে যায় যার ফলে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। এ সময় আশেপাশের অঞ্চল থেকে বাতাস প্রবল বেগে ঐ নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। বায়ুর এই প্রবল গতিকে বলে সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে বাংলাদেশের ভূ-ভাগে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে।
অপরদিকে ভারত মহাসাগরের উপর বায়ুমণ্ডল ভারী হয়ে বায়ু চাপের সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশের ভূ-ভাগে নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়।
ঘ. “গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারত মহাসাগর ও স্থলভাগে সৃষ্ট অবস্থার কারণেই সিডর, আইলা ও ফনির মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি হয়” – উক্তিটি যথার্থ।
বায়ুমণ্ডলের কোথাও নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে আশেপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বাতাস প্রবল বেগে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে যা ঘূর্ণিঝড়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশের অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড় হয় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এ পর্যন্ত কয়েকবার ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস মারাত্মকভাবে আঘাত হেনেছে।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভূ-ভাগে গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে বাতাস হালকা হয়ে উপরে উঠে। অপরদিকে ভারত মহাসাগরের উপর বায়ুমণ্ডল ভারী হয়ে বায়ুর চাপের সৃষ্টি হয়।
এ কারণে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবলবেগে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং আইলা, সিডর, ফনীর মত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি করে। অতএব বলা যায় যে, আলোচ্য উক্তিটি যথার্থ।
বাংলাদেশের জলবায়ু সৃজনশীল প্রশ্ন৩ :
হারিছ মিয়ার বাড়ীর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পদ্মা নদী। নদীকে কেন্দ্র করেই তার জীবিকা। যদিও এই নদীগর্ভেই হারিয়ে গেছে তার পূর্ব পুরুষদের অনেক সম্পদ। অন্যদিকে কবীর মিয়া এ বছর তীব্র দাবদাহের কারণে পর্যাপ্ত ধান চাষ করতে পারেননি। ফলে এ বছর তিনি মারাত্মক আর্থিক সংকটের আশংকা করছেন।
ক. আবহাওয়া কী?
খ. মৌসুমি বায়ু সম্পর্কে কী জান? লেখ ।
গ. উদ্দীপকে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে দুর্যোগ আমাদের আর্থ-সামাজিক জীবনে কীরূপ প্রভাব ফেলে? ব্যাখ্যা কর।
সমাধান : ক. আবহাওয়া হলো কোনো একটি অঞ্চলের একদিন বা দিনের কোনো বিশেষ সময়ের তাপ, চাপ ও আর্দ্রতা ।
খ. মৌসুমি বায়ু সেই বিশেষ ধরনের বায়ু যা নিয়মিতভাবে দিক পরিবর্তন করে। বাংলাদেশে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়।
এ বায়ুর প্রভাবে এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় । এ বায়ুর কারণে এ দেশে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসও হয়।
বাংলাদেশের জলবায়ূ
গ. উদ্দীপকে নদীভাঙন ও খরার কথা বলা হয়েছে। নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশে নদীভাঙন একটি নিয়মিত দুর্যোগ।
এদেশের আঁকাবাঁকা নদীগুলোর পানি প্রবল স্রোতে সোজা পথে প্রবাহিত হতে না পেরে পাড়ে এসে আঘাত করে।
এজন্য নদীর পাড় ভাঙতে থাকে। এর ফলে এদেশের অনেক আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাবে ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেলে খরা হয়।
এতে জমির সেচকাজ ব্যাহত হয় ও ফসল নষ্ট হয়।
Read Also – বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাবস্থা
প্রতিষ্ঠান পরিচিতি – ভাটপিয়ারী উ্চ্চ বিদ্যালয়
উদ্দীপকের হারিছ মিয়ার পূর্বপুরুষদের অনেক সম্পদ নদীর গর্ভে হারিয়ে গেছে। অর্থাৎ তিনি নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন।
অন্যদিকে কবীর মিয়া তীব্র দাবদাহের কারণে পর্যাপ্ত ধান চাষ করতে পারেননি।
এটি খরার ফল। তাই উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো নদীভাঙন ও খরা।
ঘ. নদীভাঙন ও খরা আমাদের আর্থ-সামাজিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নদীভাঙন একটি নিয়মিত দুর্যোগ। প্রতিবছর বিশেষত বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা প্রকটাকার ধারণ করে।
এর অন্যতম কারণ হল আঁকাবাঁকা নদীর পানির প্রবল স্রোত । সোজাপথে প্রবাহিত হতে না পেরে নদীর পাড়ে এসে আঘাত করে। এজন্য নদীর পাড় ভাঙতে থাকে।
নদীভাঙনের ফলে হাজার হাজার একর আবাদি জমি, বসতবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
ফলে এদেশের হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি ও কাজের সংস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
আবার, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এলাকাগুলোয় খরার প্রকোপ বেশি।
প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাতের অভাব ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে খরা হয়।
এর ফলে জমির সেচকাজ ব্যাহত হয় এবং ফসল নষ্ট হয়।
এতে ভুক্তভোগীরা আর্থিক অনটনের শিকার হয়।
উদ্দীপকে হারিছ মিয়া নদী ভাঙন এবং কবীর মিয়া খরার শিকার হয়েছে। এ ধরনের দুর্যোগ দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
পরিশেষে বলা যায়, খরা ও নদীভাঙন দেশের জনগণের আর্থিক ক্ষতি করে দেশের আর্থ-সামাজিক জীবনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।