শিক্ষা
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি ৭ম শ্রেনী ৮ম অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন

বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি : ৭ম শ্রেণী সমাজ ৮ম অধ্যায়
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন ১ :
মধুপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। জীবনযাত্রার মান সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। দিন দিন এখানকার লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে এলাকার জনকল্যাণকামী এমপির সুবাদে ইউনিয়নটিতে আধুনিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূর্বে এ এলাকায় শিশুমৃত্যু এবং মাতৃমৃত্যু ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।
কিন্তু এখন এখানে মৃত্যুহার অনেক হ্রাস পেয়েছে। এক হিসাবে দেখা গেছে এলাকাটিতে বছরে ১০০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করলেও বছরে মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৫ জন।
ক. বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ কী?
খ. কোন স্থানান্তরের ফলে দেশের জনসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না? ব্যাখ্যা করো।
গ. মধুপুর ইউনিয়নের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ কোনটি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মধুপুর ইউনিয়নের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়? মতামত দাও।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান :
ক. বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো জন্মহার ও মৃত্যুহারের ব্যবধান।
খ. অভ্যন্তরীণ স্থানান্তরের ফলে দেশের জনসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না। দেশের ভিতর যখন এক এলাকার লোক অন্য এলাকায় গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করে তখন তাকে অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর বলে।
এর ফলে প্রথম এলাকার জনসংখ্যা কমে যায় এবং দ্বিতীয় এলাকায় জনসংখ্যা বেড়ে যায়। তবে দেশের মোট জনসংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
গ. মধুপুর ইউনিয়নের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রধান কারণ হলো উচ্চ জন্মহার এবং নিম্ন মৃত্যুহার। কোনো দেশে বা এলাকায় বছরে যত শিশু জন্মগ্রহণ করে তার চেয়ে কম সংখ্যক মানুষ মারা গেলে সে দেশ বা এলাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
জন্ম ও মৃত্যুর ফলেই মূলত জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়ে থাকে। এ পরিবর্তন স্থূল জন্মহার ও স্থূল মৃত্যুহার দ্বারা নির্ধারিত হয়। স্থূল জন্মহার, স্থূল মৃত্যুহারের চেয়ে বেশি হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
উদ্দীপকের মধুপুর ইউনিয়নে প্রতিবছর ১০০ জন শিশু জন্মগ্রহণ করলেও মারা যায় মাত্র ১৫ জন মানুষ। এখানে প্রতিবছর ৭৫ জন লোক বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ এখানে জন্মহার বেশির কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘ. মধুপুর ইউনিয়নের জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা হলো:
১. বিবাহের ক্ষেত্রে আইনগতভাবে যে বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে তা কার্যকর করা।
২. নারী সমাজকে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী কাজের সাথে সম্পৃক্ত করা। মহিলারা উৎপাদনমুখী কাজে অংশগ্রহণ করলে জনসংখ্যা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।
৩. শিক্ষার প্রসার ঘটানো। শিক্ষা মানুষকে জীবন সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। কেননা জীবনযাত্রার উচ্চমান সম্পর্কে জনগণকে আগ্রহী করে তোলে শিক্ষা। তাই সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা কর্মসূচিকে আরও জোরদার করা।
8. ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান ও স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যাপারে বাবা-মাকে সচেতন করতে সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ করা।
৫. ছোট পরিবারের সুবিধা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন ২ :
দরিদ্র পরিবারের সন্তান জামিল জাপানে যান। সেখানে কাজ করে অর্থ উপার্জন করেন। তার পাঠানো অর্থ দিয়ে বাংলাদেশে তার পরিবার এখন স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করছে ।
ক. বাংলাদেশের আয়তন কত?
খ. জনসংখ্যা কীভাবে জনসম্পদে পরিণত হতে পারে?
গ. উদ্দীপকে জামিলের জাপান যাওয়া কোন ধরনের স্থানান্তর তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত এ স্থানান্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা
রাখে— এ সম্পর্কে তোমার মতামত দাও।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান :
ক. বাংলাদেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার।
খ. যে উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জনসংখ্যা জনসম্পদে পরিণত হতে পারে। আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য কতগুলো কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার, প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম সম্প্রসারণ, নারী শিক্ষার প্রসার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিস্তার, কৃষিভিত্তিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সম্প্রসারণ প্রভৃতি।
উদ্দীপকে জামিলের জাপান যাওয়া আন্তর্জাতিক স্থানান্তর। মানুষের একস্থান হতে অন্যস্থানে গমনকে স্থানান্তর বলে। এ স্থানান্তর অভ্যন্তরীণ কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হতে পারে।
দেশের ভিতরে যখন মানুষ একস্থান হতে অন্য স্থানে গমন করে তখন তাকে অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর বলা হয়। অন্যদিকে একটি স্বাধীন দেশ থেকে অন্য একটি স্বাধীন দেশে চাকুরি, বিয়ে, বসবাস এমনকি নাগরিকতা লাভের জন্য গমন করাকে আন্তর্জাতিক স্থানান্তর বলে।
উদ্দীপকে বর্ণিত দরিদ্র পরিবারের সন্তান জামিল বাংলাদেশ থেকে জাপানে যায়। অর্থাৎ জামিল একটি স্বাধীন দেশ থেকে অন্য একটি স্বাধীন দেশে গমন করেছে যা আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের ধারণার অনুরূপ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে জামিলের জাপান যাওয়া আন্তর্জাতিক স্থানান্তর।
ঘ. আমি মনে করি উদ্দীপকে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক স্থানান্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকে বর্ণিত জামিলের জাপানে যাওয়ার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আর আন্তর্জাতিক স্থানান্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিদেশে কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও পেশাজীবীরা তাদের অর্জিত অর্থের একটা অংশ ব্যাংকের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠায়।
এই অর্থ কেবল তাদের প্রয়োজনই মেটায় না কিংবা তাদের জীবনযাত্রার মানই বাড়াচ্ছে না, নানা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ হয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আন্তর্জাতিক স্থানান্তরের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ এদেশের কৃষি ও শিল্প, ব্যাংকিং সেবাখাত, গার্মেন্টস শিল্প ও নানা ধরনের লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হয়। এর ফলে দেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
আবার এ উৎপাদন বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। তাছাড়া চাকরি ও কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, আন্তর্জাতিক স্থানান্তর অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন ৩ :
দরিদ্র কৃষক গণি মিয়ার ছয় মেয়ে। তার স্ত্রী আবারও সন্তানসম্ভবা। এ অবস্থায় একজন স্বাস্থ্যকর্মী ভবিষ্যতে আর সন্তান না নেওয়ার জন্য স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
ক. ২০১০ সালে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব কত ছিল?
খ. শিশু মৃত্যুর একটি কারণ ব্যাখ্যা কর।
গ. গণি মিয়ার পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কোন কারণটি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পদক্ষেপ— পাঠ্যপুস্তকের আলোকে মতামত দাও।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি সৃজনশীল প্রশ্ন সমাধান :
ক. ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৯৯০ জন।
খ. বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর অন্যতম একটি কারণ হলো দারিদ্র্য। বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।
ফলে মা ও শিশু সঠিক স্বাস্থ্যসেবা, পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হয়। মূলত দারিদ্র্যের কারণেই শিশুদের একটা অংশ মৃত্যুবরণ করে।
গ. গণি মিয়ার পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে যে কারণটি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে তা হলো ছেলে সন্তানের প্রত্যাশা। আমাদের দেশের অধিকাংশ লোক মনে করেন যে, পুত্র সন্তান বৃদ্ধ পিতামাতাকে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে সক্ষম।
অধিক নিরাপত্তার আশায় তারা একাধিক পুত্র সন্তান কামনা করেন। ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, দরিদ্র কৃষক গণি মিয়ার ছয় মেয়ে। তার স্ত্রী আবারও সন্তানসম্ভবা।
এ থেকে বোঝা যায়, ছেলে সন্তানের প্রত্যাশাতেই ছয় মেয়ে সন্তান থাকার পরেও গণি মিয়ার স্ত্রী আবারও সন্তানসম্ভবা হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, ছেলে সন্তানের প্রত্যাশাই গণি মিয়ার পরিবারে জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
Read Also – বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাবস্থা
প্রতিষ্ঠান পরিচিতি – ভাটপিয়ারী উ্চ্চ বিদ্যালয়
ঘ. পাঠ্যপুস্তকের আলোকে বলা যায়, উদ্দীপকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের একমাত্র পদক্ষেপ নয়। উদ্দীপকে বর্ণিত স্বাস্থ্যকর্মী গণি মিয়া দম্পত্তিকে ভবিষ্যতে আর সন্তান না নেওয়ার জন্য স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের অন্যতম একটি পদক্ষেপ। তবে এ পদক্ষেপটি ছাড়াও বাংলাদেশে জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের আরও পদক্ষেপ রয়েছে।
যেমন— জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন । তাছাড়া বিবাহের ক্ষেত্রে আইনানুগ বয়সের (ছেলেদের ২১ ও মেয়েদের ১৮ বছর) প্রয়োগ কার্যকর করা।
প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনমুখী কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তর করা।
এই মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান ব্যবস্থা উন্নয়ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দক্ষ মানবসম্পদ শুধু দেশের জন্য নয়, বরং বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারবে।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শটি বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও তা একমাত্র পদক্ষেপ নয়।