প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ২০২১। সব ধরনের প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নুমনা

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ২০২১। সব ধরনের প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নুমনা
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। আশা করি সবাই ভালো আছেন।
বাংলা পরামশ ব্লগে আজকে আমরা আলোচনা করবো প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিয়ে ।
আজকে আমরা জানবো প্রতিবেদন কি ? প্রতিবেদন কেন তৈরী করা হয় ?
এরপর আমরা ধারাবাহিকভাবে শিখবো, সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম । তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ।
অফিসিয়াল প্রতিবেদন লেখার নিয়ম । সম্পাদকীয় প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ।অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার নিয়ম।
করোনা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম । খাদ্যে ভেজাল প্রতিবেদন লেখার নিয়ম । গবেষনা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম বাংলা ২য় পত্র Hsc । প্রতিবেদন লেখার নিয়ম Ssc । আপনি যদি এস এস সি বা এইচ এস সির ছাত্র হন তবে আপনার জন্য প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম জানা অতি জরুরী ।
আপনি যদি বাংলা দ্বিতীয় পত্রে ভালো র্মাক পেতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই প্রতিবেদন লেখা শিখতে হবে । তো যাইহোক চলুন দেখে নেই বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরন।
প্রতিবেদন কী ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন প্রতিবেদন কি? সহজ কথায় বলতে গেলে প্রতিবেদন হলো, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণ । ইংরেজীতে যাকে Report বলা হয় ।
প্রতিবেদন কাকে বলে ?
সহজ সরল ভাষায় কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর লেখা তথ্য সমৃদ্ধ বিবরণকেই প্রতিবেদন বলে ।
প্রতিবেদন কত প্রকার?
প্রতিবেদনের কোন সুনির্দিষ্ট শ্রেনীবিভাগ নেই ।বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদন নানা রকম হতে পারে।
তবে বহুল প্রচলিত কিছু প্রতিবেদন আছে সেগুলি নিন্মে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ।
১। সংবাদ প্রতিবেদন
২। তদন্ত প্রতিবেদন
৩। সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন ।
৪। খেলাধুলা বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রতিবেদন ।
৫। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিষয়ক প্রতিবেদন ।
৬। সাক্ষাৎকার মুলক প্রতিবেদন।
৭। সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
৮। অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ইত্যাদি ।
একটি ভালোমানের প্রতিবেদন লিখার নিয়মঃ
প্রতিবেদনে একটি নজরকাড়া শিরোনাম থাকবে ।
প্রতিবেদন হবে সংক্ষিপ্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ ।
প্রতিবেদনে প্রকাশ করা সমস্ত তথ্য হবে নির্দিষ্ট, সুনির্বাচিত, নির্ভুল , সম্পূর্ণ এবং সহজ সরল ভাষায় ।
আপনার প্রতিবেদনে দেওয়া শিরোনামের সাথে মুল প্রতিবেদনের অবশ্যই মিল থাকবে ।
প্রতিবেদনে কোন ধরনের অগ্রীম কথা বা ভবিষ্যৎবাণী করা উচিৎ নয় ।
প্রতিবেদনের অবশ্যিক অংশ কি কি ?
প্রতিটি বিষয়ের মৌলিক বা অবশ্যিক কিছু বিষয় থাকে যা ছাড়া ঐ বিষয় পূর্ণতা পায় না ।
ঠিক তেমনই প্রতিবেদন লিখতে গেলেও এর কিছু আবশ্যিক বিষয় মাথায় রাখতে হবে ।
১। শিরোনাম
২। প্রতিবেদকের নাম
৩। স্থান
৪। তারিখ
এই যে চারটি বিষয় বললাম এই চারটি বিষয় প্রতিবেদেনে উপস্থিত থাকতেই হবে । তা না হলে আমরা সেটাকে প্রতিবেদন বলতে পারি না ।
প্রতিবেদনের শিরোনামঃ
একটি আদর্শ প্রতিবেদনের শিরোনাম হবে নজরকাড়া । এমন নজরকাড়া শিরোনাম দিতে হবে যাতে পাঠক আপনার পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে বাধ্য হয় ।
প্রতিবেদনের শিরোনাম দেখেই যেন পাঠকের মনে এক ধরনের কৌতুহল জাগে সেই পুরো প্রতিবেদনটি পড়ার।
প্রতিবেদকের নামঃ
একটি প্রতিবেদন কে আদর্শ প্রতিবেদন হিসেবে গঠন করার দ্বিতীয় ধাপ হলো প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের নাম উল্লেখ করা ।
আমরা যখন বিভিন্ন পত্রিকা দেখি তখন খেয়াল করবেন শিরোনামের নিচে প্রতিবেদকের নাম বা স্টাফ রিপোর্টার বা নিজেস্ব প্রতিনিধি লেখা থাকে । মুলত এটাই প্রতিবেদকের নাম
স্থানঃ
প্রতিবেদনের তৃতীয় গুরুত্বর্পূণ বিষয় হলো প্রতিবেদনটি কোন স্থান হতে পাঠানো হয়েছে বা প্রতিবেদনটিতে কোন এলাকার বিবরণ দেওয়া হয়েছে ।
তারিখঃ
প্রতিবেদনে সঠিক তারিখ উল্লেখ রাখতে হবে । এতে করে পাঠক সহজেই বুঝতে পারবে প্রতিবেদনটি কত তারিখের ।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়মঃ
এখন আমরা শিখবো কিভাবে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন লিখতে হয় । সংবাদ প্রতিবেদন লিখতে হলে আপনাকে প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হলো সংবাদের জন্য একটি শিরোনাম দিতে হবে ।
শিরোনাম ছাড়া সংবাদ প্রতিবেদন হয় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খবরের সারসংক্ষেপ বিষয়বস্তু শিরোনামে প্রকাশ পায় । পাঠক শিরোনাম দেখেই সিধান্ত নেয় তিনি খবরটি পড়বেন কি না ?
সংবাদ প্রতিবেদন শুরু হয় প্রতিবেদকের নাম, প্রতিবেদকের পদবী, ঘটনার স্থান এবং প্রতিবেদনের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু নিয়ে । এই পর্ব টা শেষ হয় মাত্র ২/৩ লাইনের মধ্যে ।
এর পরের অংশে প্রতিবেদনের বিস্তারিত বর্ননা লিখতে হয় । সংবাদ প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে একটা মজার বিষয় হলো, এখানে শিরোনাম লিখেই সরাসরি মুল লেখায় চলে যাওয়া যায় ।
এ ধরনের প্রতিবেদনে কোন অনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই ।
সংবাদ পত্রে প্রতিবেদন লেখার উদাহরণঃ
প্রশ্ন আসলো, নদী ভাঙ্গন রোধে করনীয় সর্ম্পকে একটি সংবাদ প্রতিবেদন রচনা করো ।
ত্রান নয়, টেকসই ক্রসবার বাধ চাই।
ফাহিম জাহেদ, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে সিরাজগঞ্জের যমুনা পারের মানুষদের দুঃখ কষ্টের খবর পাই ।
যমুনার পানি বাড়তে থাকে , সেই সাথে বাড়তে থাকে যমুনা পারের মানুষদের কষ্ট ।
প্রতি বছরই যমুনার পার ভাঙ্গে । ভিটেমাটি হারা হয় মানুষজন । ত্রান সামগ্রীও আসে । চলে দু একদিন ত্রান বিতরণ উৎসব ।
পানি কমতে থাকে ভাঙ্গনকবলীত মানুষদের খোঁজ নেবার মত আর কেই থাকে না ।
বছর ঘুরে আবার আসে বর্ষা মৌসুম আবারো ভাঙ্গে যমুনা নিস্ব হয় আরো কিছু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ । এভাবেই চলছে বছরের পর বছর । স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি কখনই ।
সর্বশেষ গত মাসে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাচঠাকুরী গ্রামে নদীভাঙ্গন দেখা দেয়, এতে ভিটে মাটি হারায় হাজার হাজার মানুষ ।
যমুনার ভাঙ্গনে নিঃস্ব এই খেটেখাওয়া মানুষগুলো আর ত্রান চা্য় না । তারা চায় নধী ভাঙ্গন রোধে একটি স্বায়ী সমাধান ।
তাদের একটাই দাবি উজানে একটি টেকসই ক্রসবার বাদ নির্মমান করলে নদী ভাঙ্গন রোধ করা যেতে পারে ।
সরজমিনে পরিদরষনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারানো অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে পাশের ওয়াবদা বাদে ।
অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাবন করছে ।
তাদের সাথে এই প্রতিবেদকের দেখা হলে সবাই সরকারের কাছে এই প্রতিবেদকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন সরকার যেন নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী করনীয় ঠিক করে ।
প্রতিবেদকের নাম : ফাহিম জাহেদ
ঠিকানাঃ সিরাজগঞ্জ সদর
প্রতিবেদনের শিরোনাম : ত্রান নয়, টেকসই ক্রসবার বাধ চাই ।
প্রতিবেদন তৈরির সময় : বিকেল ৪ টা
প্রতিবেদন তৈরির তারিখ : ২০ আগষ্ট ২০২১।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়মঃ
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম কানুন শেখার এই পর্যায়ে আমরা এখন শিখবো কিভাবে সাধারন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লিখতে হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক বা দপ্তরিক প্রতিবেদন কি?
প্রতিষ্ঠান বা দাপ্তরিক প্রয়োজনে যে প্রতিবেদন লেখা হয় তাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন বা দাপ্তরিক প্রতিবেদন বলে৷
এ জাতিয় প্রতিবেদন শুরু হয় “বরারবর প্রধান শিক্ষক” দিয়ে।
এখানে প্রধান শিক্ষকের পত্রাদেশের একটি সুত্র উল্লেখ করতে হবে। সংক্ষেপে আমরা যেটা কে ( “স্মারক নাম্বার) বলে চিনি।
এরপর প্রতিবেদনের শিরোনাম লিখবে, শিরোনাম শেষ করেই বিষয়বস্তুর সাথে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা লিখবেন।
প্রতিষ্ঠানিক বা দাপ্তরিক প্রতিবেদন লেখার উদাহরণঃ
২১ আগষ্ট ২০২১
প্রধান শিক্ষক
ভাটপিয়ারী জঃ রাঃ সাঃ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়।
ভাটপিয়ারী, ছোনগাছা, সিরাজগঞ্জ।
বিষয়ঃ বিদ্যালয়ে উদযাপিত “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে প্রতিবেদন।
সুত্রঃ ভাঃজঃরঃসাঃবিঃ ২০২১/২১(ক) তারিখ ২১/৮/২০২১।
জনাব,
সদ্য শেষ হওয়া ভাটপিয়ারী জঃ রঃ সাঃ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে উৎযাপিত অনুষ্ঠানমালা নিয়ে প্রতিবেদন পেশে আদিশ্ট হয়ে নিম্নলিখিত প্রতিবেদন পেশ করছি।
ভাটপিয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের উদ্যোগে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” পালিত।
সিরাজগঞ্জে ভাটপিয়ারী উচ্চবিদ্যালয়ের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক জনাব, ফজলুল হকের সঞ্চালনায় দিনব্যাপী নানা জমকালো আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে বিদ্যালয়টি।
দিনব্যাপী আয়োজনের সূচনা হয় সকাল ৬টায় প্রভাত ফেরির মাধ্যমে।খুব সকালে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সমবেত হতে থাকে স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। যোগ দেন স্কুলের সকল শিক্ষক কর্মচারীরাও।
আপনারা পড়ছেন প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
সবাই মিলে স্কুলে অবস্থিত শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সে সময় সকলের মুখে উচ্চারিত হয়েছে অমুর একুশের গান “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী.. আমি কি ভুলিতে পারি।
পুষ্পস্তবক অর্পণ করার পর শুরু হয় কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গিত অনুষ্ঠান পর্ব। এ পর্বে ছাত্র ছাত্রীরা বাংলা সহিত্যের বড় বড় কবিতের কবিতা আবৃত্তি করে। এবং পাশাপাশি অনেক ছাত্র ছাত্রী তাদের স্বরচিত কবিতাও আবৃত্তি করতে দেখা গেছে।
কবিতা আবৃত্তি শেষে, বসে হয় দেশাত্মবোধক গানের আসর। বিদ্যালের ছাত্র ছাত্রী থেকে শুরু করে শিক্ষকরাও যোগ দেন এই আসরে। গাইতে থাকেন বিভিন্ন জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক গান।
বিকেল বেলা আয়োজন করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উপর আলোচনা সভা এতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল মোনায়েম খানের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের রাজপুত্র কবি” গোলাম মোস্তফা টুটুল”
স্কুলের শিক্ষক সহ বেশকয়েকজন ছাত্র মাতৃভাষা দিবসের উপর সুন্দর তথ্য বহুল আলোচনা রাখেন।
এরপর শুরু হয় দোয়া অনুষ্ঠান বিদ্যালয়ের প্রধান মৌলবি শিক্ষক মাওলানা আহসান উল্লাহ দোয়া অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন । এসময় তিনি মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়া সকলকের প্রতি দোয়া করেন এবং বলেন আল্লাহ যেন প্রত্যেককেই শহীদ হিসেবে কবুল করেন৷
দোয়া অনুষ্ঠান শেষে দিনব্যাপী আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষনা করেন বিদ্যালয় প্রধান।
প্রতিবেদকের নামঃ ফাহিম জাহেদ
৯শ শ্রেনী রোল নং ১২
ভাটপিয়ারী উচ্চবিদ্যালয়।
প্রতিবেদনের শিরোনামঃ
তারিখঃ ২৮/২/২০২১
প্রতিবেদন তৈরীর সময়ঃ সকাল ১০ টা
তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়মঃ
এখন আমরা শিখবো কিভাবে একটি তদন্ত প্রতিবেদন লিখতে হয়। এর আগে আমরা শিখেছি কিভাবে সাধারন প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লিখতে হয়।
মজার বিষয় হলো সাধারণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন আর তদন্ত প্রতিবেদনের মাঝে খানিকটা মিল আছে। তবে এখানে প্রতিবেদন লেখকের ব্যাক্তিগত মতামতের একট গুরুত্ব আছে। এই প্রতিবেদন দায়িত্ব প্রদানকারী কতৃপক্ষের সমীপে উপস্থাপন করতে হয়।
প্রতিবেদনের শুরুতে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা লিখতে হয়। এরপর এই ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেই বিষয়ে কার্যকর করনীয় লিখতে হয়।
তদন্ত প্রতিবেদন লেখার উদাহরণঃ
মনে করুন আপনার এলাকায় নিয়মিত গরু চুরির ঘটনা ঘটে। কারন উদঘাটনের জন্য একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করুন।
প্রথমে লিখতে হবে তারিখঃ
২২ আগষ্ট ২০২১
জেলা প্রসাশক
সিরাজগঞ্জ
বিষয়ঃ গরু চুরির ঘটনা সক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রনয়ন।
জনাব,
আপনার পত্র নং ২০২১/সি.জে.ঐ/২১ আদিষ্ট হয়ে গরু চুরি সংক্রান্ত একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হলো।
প্রতিবেদকঃ ফাহিম জাহেদ
সিরাজগঞ্জ,সদর।
তদন্ত প্রতিবেদন নমুনাঃ
আর কত চুরি হবে কৃষকের স্বপ্ন!!
ফাহিম জাহেদ,সিরাজগঞ্জ সদরঃ
রাত প্রায় ১১টা। আধো আধো ঘুমে নুয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পাচঁঠাকুরী গ্রাম। হঠাৎ চোর চোর শব্দে হাঁক ডাঁক শুনে ঘুমে উবে যায় সবার।
হাতের কাছে যে যা পায় নিয়ে বের হয় চোর ধরার জন্য। মুহুর্তের গ্রামের সবাই একত্র হয় চোর ধরার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে! উত্তর পারার টিটু মল্লিকের ২ টি গাভি চোরে নিয়ে গেছে। এক পলকেই নিভে গেলো টিটু মল্লিকের স্বপ্ন।
শুধু টিটু মল্লিক নয়। এরকম প্রতিদিনই ঘটছে গরু চুরির ঘটনা। প্রতিদিন শেষ হচ্ছে কৃষকের বেঁচে থাকার সোনালী স্বপ্ন। প্রতিদিন এতো এতো চুরির ঘটনার পরও কোন ভাবেই যেন থামানো যাচ্ছে না গরু চুরির মত ঘটনা।
সরজমিনে তদন্ত করে এই ঘটনার পিছনে কিছু কারন খুঁজে পেয়েছি সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
১। এই গ্রামটি নদী তীর ঘেষে অবস্থিত বিধায় চোর গরু নিয়ে সহজেই ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে পালিয়ে যেতে পারে। ধরা যায় না।
২। এই এলাকার রাস্তাঘাট দুর্গম বিধায় সহজেই এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে পৌছা যায় না।
৩। এই এলাকায় বিদ্যুৎ থেকেও নেই, অতিরিক্ত লোডশেডিং এর কারনে চোর সুযোগ বুঝে যখন বিদ্যুৎ থাকে না তখন কৃষকের ঘরে ঢুকে চুরি করে নিয়ে যায়।
৪। বিগত সময়ে আটক গরু চোরদের উপযুক্ত বিচার না হওয়া।
এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বলে গরু চুরি রোধে কিছু সুপারিশ পেশ করা হলোঃ
১। পাচঁঠাকুরী গ্রামে রাত্রে চৌকিদার দিয়ে বা যেকোন উপায়ে পাহারা বসানোর ব্যাবস্থা করা,
২। গ্রামের প্রতিটি পয়েন্টে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যাবস্থা করা।
৩। গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নয়ন করা।
৪। নদীতে নিয়মিত নৌপুলিশের টহল জোরদার করা।
৫। চোর ধরার জন্য সর্বক্ষনিক একটি দ্রুতগামী স্প্রিডবোড নদী পারে প্রস্তুত রাখা।
৬৷ ধরা পরা চোরদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার নিয়মঃ
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম শেখার এ পর্যায়ে আমরা শিখবো কিভাবে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে হয়।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকাতা কি?
গোপন বা লুকিয়ে রাখা তথ্য মানুষের সামনে তুলে ধরাকেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বলে । সাধারন বা ক্ষমতাবান কেউ ইচ্ছেকৃতি এসব তথ্য গোপন রাখে । একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেনদ তৈরী করতে একজন প্রতিবেদক কে মাসের পর খাটতে হয় । ঘাটতে হয় নানা ধরনের নথীপত্র ।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সাংবাদিকতার এমন একটি ধরন যেখানে প্রতিবেদক একটি ঘটনার গভির বিচার বিশ্লেষণ করে একটি সংবাদ গল্প তৈরী করেন। এখানে প্রতিবেদকের নিজেস্ব কোন মতামত দেবার কোন সুযোগ নেই।
নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে ঘটনার মুল বর্ণনা সুন্দরভাবে উপস্থাপনই অনুসসন্ধানী প্রতিবেদনের সার্থকতা।
বিভিন্ন বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে পারে যেমন, খুন, গুম, ধর্ষন, বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়ম।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখতে হয় মুলত উল্টা পিরামিড কঠামোতে । অর্থাৎ সংবাদ সুচনায় মুল তথ্য দিয়ে সংবাদ শুরু করতে হবে । এরপর অধিক গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিতে হবে ।
এরপর কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে হবে । এভাবে পুরো প্রতিবেদনটি লিখতে হবে ।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হতে হবে সুষ্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং সুনির্দিষ্ট । প্রতিবেদন তৈরীতে যথেষ্ট সময় লাগলেই এই প্রতিবেদন পড়তে তেমন সময় লাগবে না ।
এই প্রতিবেদন Straight Jacket পদ্ধতিতে লিখতে হবে । কোন কিছু বাড়িয়ে লেখা যাবে না । লিখতে হবে সোজাসুজি ।
এসব প্রতিবেদনে প্রতিবেদক তার নিজের মতামত দিতে পারবে না । কাওকে দোষারোপ করতে পারবে না । শুধু অনিয়ম অসংঙ্গতি তুলে ধরবেন সকলের মাঝে ।
আপনারা পড়ছেন প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদনে এমন কিছু লেখা যাবে না যাতে করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক মানহানী মামলার সম্মুখিন হন ।
প্রতিবেদনে যেসব তথ্য সরবরাহ করা হবে । সেগুলো অবশ্যই নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য হতে হবে । কোনভাবেই মিথ্যা বা আংশিক সত্য তথ্য পাঠকের সামনে তুলে ধরা যাবে না ।
প্রতিবেদন যদি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় তবে, পর্বগুলি এমনভাবে সাজাতে হবে যাতে পাঠক এক পর্ব পড়ে পরের পর্ব পড়ার জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষা করতে থাকে ।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদন হলো যুক্তিনির্ভর সংবাদ । এখানে আবেগের কোন স্থান নেই । যেই প্রতিবেদক যত বেশী যুক্তি ব্যাবহার করবেন তিনি ততো ভালো অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লিখতে পারবেন ।
আজকের পর্ব এখানেই শেষ করছি । সামনে আবার ইনশাআল্লাহ ভিন্ন কোন টপিক নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো । সে পর্যন্ত ভালো থাকেন সুস্থ থাকেন এই কামনা করি ।
আর আপনাদের যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের কে কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন । আমরা চেষ্টা করবো আপনাকে যথাসাধ্য সাহায্য করার ।
পড়ন – অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নিয়ম